শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১
The Daily Post

কক্সবাজারের খুরুশকুল সেতুর বৈদ্যুতিক তার চুরি, ছিনতাই আতঙ্কে পথচারীরা

কক্সবাজার প্রতিনিধি

কক্সবাজারের খুরুশকুল সেতুর বৈদ্যুতিক তার চুরি, ছিনতাই আতঙ্কে পথচারীরা

কক্সবাজারের বাকখালী নদীর উপর নির্মিত খুরুশকুল সেতুর বৈদ্যুতিক তারসহ একের পর এক মালামাল চুরি হচ্ছে, ভেঙে ফেলা হয়েছে রিলিংসহ স্লেভ। সিকিউরিটি গার্ডদের মারধর ও জিম্মি করে সেতুর প্রায় ৫০ লাখ টাকার বৈদ্যুতিক লাইনের তামার তার লুট করেছে দুর্বৃত্তরা। সেতুর ওপর বাতিগুলো জ্বলছে না।

এতে সেতু এলাকা অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। পুরো এলাকা অন্ধকার থাকায় পথচারীদের মধ্যে ছিনতাই আতঙ্ক বিরাজ করছে। এই সেতু নির্মিত হওয়ায় অর্থনীতিতে দারুন সম্ভাবনা দেখেছিলেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু সেই স্বপ্ন বিলীন হতে চলেছে। তবে, সংশ্লিষ্টরা বলছে, সেতুর নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, কক্সবাজার শহর থেকে মাত্র তিন মিনিটের দূরত্বে নির্মিত হয়েছে দৃষ্টিনন্দন খুরুশকুল সেতু। বাঁকখালী নদীর উপর নির্মিত এই সেতুকে ঘিরে অর্থনীতিতে সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। সেতুটি শুধুমাত্র দুই পাড়ের মানুষের সংযোগ ঘটায়নি, নতুন করে সংযোগ স্থাপন করেছে খুরুশকুলের অর্থনীতিতে।

বাকখালী নদীর উপর নির্মিত খুরুশকুল সেতুর বৈদ্যুতিক লাইনের তামার তার কয়েক দফায় চুরি হয়ে গেছে। সর্বশেষ ১২ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে ল্যাম্প পোস্টের নিচের ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ লাইনের ওপরের ঢাকনা খুলে ও ভেঙে মূল্যবান তামার তার কেটে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। বাধা দিতে গিয়ে মারধরের শিকার হন তিন প্রহরী। 

তাদেরকে মারধর করে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তারগুলো নিয়েছে বলে জানিয়েছেন নিরাপত্তা প্রহরীরা। এতে করে সেতু নিরাপত্তায় নিয়োজিতরাও নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি চুরি হওয়া বিদ্যুতের আংশিক তার পরিত্যক্ষ উদ্ধার করেছে স্থানীয়রা। সেতুর পার্শ্ববর্তী একটি মাছের খামারের পুকুরে ফেলে রাখা অবস্থায় ওই তারগুলো উদ্ধার করা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. জাবেদ জানান, খুরুলকুল সেতু দিয়ে প্রতিদিন দুই পারের হাজার হাজার মানুষ যাওয়া-আসা করেন। কিন্তু সন্ধ্যা নামলেই এখন লোকজন সেতু দিয়ে যাতায়াত করতে ভয় পাচ্ছেন। বৈদ্যুতিক তার চুরি হওয়ায় সেতুর ২ পাশে লাগানো একটি বাতিও জ্বলছে। গত সপ্তাহ ধরে চলছে এ অবস্থা।

ফলে পুরো সেতু জুড়েই ভুতুড়ে অন্ধকার বিরাজ করে। ঘটছে নানান ধারণের দুর্ঘটনা। গাড়িগুলো হেডলাইট জ্বেলে চলাচল করলেও অন্ধকারে বেশ বিড়ম্বনায় পড়তে হয় পথচারীদের। ভুতুড়ে অন্ধকারে প্রতিদিনই চুরি, ছিনতাইসহ ছোটখাট নানা অপরাধ ঘটছে ‘খুরুশকুল সেতু’ এলাকায়।

সেতু নির্মাণে নিয়োজিত ঠিকাদারী প্রতিষ্টান মীর আকতার হোসেন লিমিটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার আহম্মদ শিহাব জামান জানিয়েছেন, সেতুটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরকে অনেক আগে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।

চুরি যাওয়া আংশিক তার উদ্ধার করা হয়েছে ১৪ ফেব্রুয়ারি। পাশ্ববর্তী একটি খামারে লুকিয়ে রাখা অবস্থায় আংশিক তার উদ্ধার হয়েছে, তবে চোর সনাক্ত হয়নি। চোরের দল কতৃক সেতুর মুল্যবান তার চুরি ও স্লেভ ভেঙে ফেলায় প্রায় ৭০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এঘটনায় কক্সবাজার সদর মডেল  থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

কক্সবাজার এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন খান জানান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে খুরুশকুল সেতুটি কাজ বাস্তবায়ন করেছে এলজিইডি। বেসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রণালয় থেকে সেতুটি এলজিইডিকে হস্তান্তরের জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে।

তিনি জানান, তার চুরি ঘটনাটি দুঃখজনক। অন্ধকার সেতু, পথচারীদের মধ্যে ছিনতাই আতঙ্ক বাড়ে। সেতুটির সুরক্ষায় সিসিটিভি ক্যামরা স্থাপন করার পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদেরও ভুমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি।

কক্সবাজার শহর থেকে মাত্র তিন মিনিটের দূরত্বে নির্মিত হয়েছে দৃষ্টিনন্দন এ সেতু। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ২৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৫৯৬ মিটার দৈর্ঘ্যের দৃষ্টিনন্দন এই সেতুটি বাস্তবায়ন করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কতৃক উদ্বোধনের পর জনগণের চলাচলে জন্য খুলে দেয়া হয় এই সেতু।

টিএইচ